পঞ্চম বলের খোঁজে সার্ন

পঞ্চম বলের খোঁজে সার্ন

আন্তঃপারমাণবিক স্তরে গজ বোসন নামের কণার বিনিময়ের মাধ্যমে তিনটি বল ক্রিয়া করে। তড়িৎ-চুম্বকীয় বল বাহক গজ বোসন হলো আলোর কণা বা ফোটন। বিভিন্ন কোয়ার্কের মধ্যে প্রবল পারমাণবিক বলের বাহক গজ বোসন হলো গ্লুয়ন। আর, তড়িৎ-দুর্বল পারমাণবিক বলের ক্ষেত্রে কোয়ার্ক, ইলেকট্রন এবং অন্যান্য কণার মধ্যে যে গজ বোসন বিনিময় হয় সেগুলি হলো W+ , W– এবং  Z0 ।চতুর্থ বল, মহাকর্ষের বাহক গজ বোসন 'গ্র‍্যাভিটনের' অস্তিত্ব এখনও প্রমাণিত হয়নি। তাই X১৭ কণার অস্তিত্ব প্রমাণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছে পঞ্চম বলের অস্তিত্ব।

 

সার্নের বিজ্ঞানীরাও পঞ্চম বলের খোঁজে কাজ করে চলেছেন। তাঁদের লক্ষ্য কণা হলো বিউটি মেসন। দুই কোয়ার্ক-বিশিষ্ট হ্যাড্রনকে মেসন বলে।আন্তঃপারমাণবিক স্তরে হ্যাড্রন কণা হলো প্রোটন এবং নিউট্রন। বিউটি মেসনগুলি স্থায়ি নয়। এরা ক্ষয়িত হয়ে অন্যপ্রকার মেসন এবং লেপটনে পরিণত হয়। লেপটন হলো পরমাণুর অভ্যন্তরে অবস্থিত ইলেকট্রনের সমগোত্রীয় বিভিন্ন ভরের কণা। ইলেকট্রন ছাড়া বাকিগুলি হলো মিউয়ন (ইলেকট্রনের ২০০ গুণ ভারী) এবং টাউ (ইলেকট্রনের ৩০০ গুণ ভারী)। লেপটনের সর্বজনীনতা নীতি অনুযায়ি ইলেকট্রন, মিউয়ন এবং টাউ নিজেদের মধ্যে এবং অন্য কণার সঙ্গে একই সম্ভাব্যতা নিয়ে ক্রিয়া করবে।

 

বিজ্ঞানিরা লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারে উৎপন্ন বিউটি মেসন থেকে ইলেকট্রন এবং মিউয়ন উৎপন্ন হওয়ার হার পরীক্ষা করে দেখলেন যে এই দুই লেপটনের উৎপন্ন হওয়ার  হারের মধ্যে ১৫% পার্থক্য হচ্ছে। এই দুই হার সমান না হওয়াতেই সন্দেহের অবকাশ আছে। ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক বেন অ্যালানাক বলেছেন, “হয়তো নতুন কোন বল বিউটি মেসন থেকে মিউয়নে প্রত্যাশিত হারে ক্ষয়িত হতে দিচ্ছে না।” সার্নের বিজ্ঞানিরা হারের যে পার্থক্য পেয়েছেন তার তাৎপর্য ‘৩ সিগমা’ যার অর্থ ৩৩৩ ভাগের মধ্যে ১ ভাগ মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা। এই ধরনের পরিসংখ্যাত ফলকে পরীক্ষামূলক কণা পদার্থবিদরা ‘নজির’ (evidence) বলেন। যখন এই পার্থক্য ‘৫ সিগমা’ হবে (অর্থাৎ, ৩.৩ মিলিয়ন ভাগের মধ্যে ১ ভাগ মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা) তখনই তাকে আবিষ্কার বলা যাবে। তাই, আরও পরীক্ষার প্রয়োজন এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে।

 

বিউটি মেসনের ক্ষয়ের ক্রিয়া W এবং Z গজ বোসন বাহিত তড়িৎ দুর্বল বলের মাধ্যমে লেপটনের সর্বজনীনতা নীতি মেনে চলে। এখন দেখা যাক উপরোক্ত পরীক্ষালব্ধ তথ্যকে প্রমাণ করতে অন্য কোন অজানা গজ বোসন বাহিত পঞ্চম বলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় কি না।

 


Comments